SCIENCE
বিজ্ঞানী গ্যালিলিওকে বাধ্য করা হয়েছিল কোপার্নিকাসের সৌরকেন্দ্রিকতাবাদকে ভুল বলতে।
"সূর্যই মহাবিশ্বের(আসলে সৌরজগতের) কেন্দ্রস্থল এবং গতিহীন স্থির -এই ভ্রান্ত ধারণা আমি ত্যাগ করছি, আমি কোনও প্রকারেই আর উক্ত ভ্রান্ত তথ্য সমর্থন, প্রচার বা ঘোষণা করব না।"
-১৬৩৩ সালের আজকের দিনটিতে (২২ জুন) ক্যাথলিক চার্চের তোপের মুখে বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলেই(১৫৬৪-১৬৪২) আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে এ বক্তব্য দিতে বাধ্য হন।
আধুনিক বিজ্ঞানের জনক খ্যাত বিজ্ঞানী গ্যালিলিও মনেপ্রাণে কোপার্নিকাসের (১৪৭৩-১৫৪৩) 'সৌরকেন্দ্রিক সৌরজগত' মডেলে বিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু পূর্বসুরীদের করুণ পরিণতি দেখে সুনিশ্চিত প্রমাণ ছাড়া এর পক্ষে বক্তব্য দেওয়ার ঝুঁকি তিনি নেননি।
অবশেষে দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে তিনি বৃহস্পতিকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকা চারটি উপগ্রহ আবিষ্কার করে দেখান। এতে করে 'সূর্যসহ সকল জ্যোতিষ্ক কেবল পৃথিবীকেই কেন্দ্র করে ঘুরছে'- হাজার বছরের এ ভ্রান্ত ধারণা নিমিষেই ভুল প্রমাণিত হয়ে যায়। প্রতিষ্ঠিত হয় কোপারনিকাসবাদ।
কিন্তু তাঁর এই আবিষ্কার মেনে নিতে পারেননি এরিস্টটলবাদী পন্ডিতরা। কেননা এরিস্টটল পৃথিবীকেন্দ্রিক মহাবিশ্বে বিশ্বাসী ছিলেন। এই মতবাদের মত এরিস্টটলের আরো অনেক বক্তব্যই গ্যালিলিও ভুল প্রমাণ করে দিয়েছিলেন। এদিকে আবার কোপার্নিকাসবাদকে ক্যাথলিক চার্চ বাইবেল বিরোধী মনে করতো।
এরিস্টটলবাদী পন্ডিতরা বরাবরই কোপার্নিকাসবাদকে নিষিদ্ধ করতে ক্যাথলিক চার্চকে প্ররোচিত করেছিল। গ্যালিলিওর বেলাতেও তাই হলো। গ্যালিলিও রোমের ধর্মীয় কর্তৃপক্ষকে বুঝাতে চাইলেন- বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব নিয়ে বলার উদ্দেশ্য বাইবেলের ছিল না। যেখানে বাইবেলের সাথে সাধারণবুদ্ধি সাংঘর্ষিক,বাইবেল সেখানে নিছকই রূপক।
কিন্তু কে শুনে কার কথা! অবশেষে গ্যালিলিওকে ভ্যাটিকান কর্তৃপক্ষ আদালতের কাঠগড়ায় এনে নিজের প্রমাণিত সত্যকে অস্বীকার করতে বাধ্য করান। নিষেধাজ্ঞা জারি করেন তাঁর শিক্ষকতা ও গ্রন্থপ্রকাশের উপর। জীবনের শেষ ৯ টি বছর গৃহবন্দী হয়েই কাটাতে হয় তাঁকে। যদিও বন্দিদশাতেও অন্ধ হয়ে যাবার আগে ঠিকই তিনি গতির নিয়ামক সম্পর্কিত সূত্রাবলী নিয়ে একটি গ্রন্থ রচনা করে যান।
১৬৩৩ সালের ২২ জুনের এই লজ্জাজনক ঘটনায় এরিস্টটলপন্থীরা আপাত জয়লাভ করলেও সত্য কিন্তু চাপা থাকে নি। অচিরেই গ্যালিলিওর পরীক্ষালব্ধ ফলাফল সত্য বলে স্বীকৃতি পায়। এমনকি ওনার মৃত্যুর ৩২৬ বছর পর ১৯৬৮ সালে স্বয়ং ভ্যাটিকান কর্তৃপক্ষই গ্যালিলিওকে নির্দোষ ঘোষণা করতে বাধ্য হয়।
No comments:
Post a Comment